মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির "কট্টর বিরোধী" তাই ভোটের মুখে ধর্মীয় গোঁড়ামি, উন্মাদনার জিগির তুলে ভোটবাক্সে ভরতে এবছর বাংলাতেও NI Act এ রামনবমীর ছুটি দেওয়া হল।
হাজার হোক, উৎসবের রাজ্য বলে কথা। সারাদিন ধর্মোন্মাদ হয়ে লোকজন লাঠি, তরোয়াল, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে 'জ্যায় শ্রীরাম' মার্কা রণহুংকার দিতে দিতে মিছিল করবে, মসজিদের সামনে গিয়ে অসভ্যতা করে উস্কানিমূলক কাজ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে মেরুকরণ করার চেষ্টা হবে। পুলিশ প্রশাসন নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি হয়ে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকবে।
দু:খের বিষয়, আমাদের পরিচিত অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে যারা বিজেপি সমর্থক না হলেও মনে করেন, "ওদের এবার একটু শিক্ষা দেওয়া উচিত"। এক্ষেত্রে "ওদের" বলতে যে মুসলিম জনগণকে বোঝানো হচ্ছে সেটা বুঝতে রকেট সায়েন্স লাগেনা।
এই তথাকথিত শিক্ষিত মানুষরা রাম মন্দির উদ্বোধনেও প্রকাশ্যে না হোক, অন্তত মনে মনে অত্যন্ত খুশি হয়েছিল। এবার ছুটি পাওয়ার ফলে তারাও বাইক নিয়ে বানর সেনাদের সাথে যোগ দিয়ে ভিড় বাড়াবে। এরকম আপাত শিক্ষিত মানুষরা বুঝতে পারছেননা এতে ঠিক কী ক্ষতি হয়েছে, ফলে তারা এই নতুন ছুটির দিন পেয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছে।
তাই প্রশ্ন উঠছে এত বছর ধরে মহরমেও তো অস্ত্র মিছিল হয়েছে তাহলে এখন হিন্দুরা করলে সমস্যা কী?
একজন যুক্তিবাদী হিসাবে আমরা এই জাতীয় কোন অনুষ্ঠানকেই সমর্থন করতে পারিনা কথাটা ঠিক। কিন্তু বিষয় হল বর্তমান সময়ে আমরা মহরম আর রামনবমীকে একই দৃষ্টিতে দেখতে পারিনা। আমরা বছরের পর বছর মহরমের মিছিল দেখতে অভ্যস্ত ফলে এটা মানুষের ভিতর নতুন করে আর কোন ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করতে পারেনা। মহরমের সময় মন্দিরের সামনে গিয়ে কোনরূপ উস্কানিমূলক কাজ করা হয়না। বর্তমান সময়ে ধর্ম রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠেছে। স্পষ্টতই মহরমের অনুষ্ঠানের সাথে যেহেতু ক্ষমতা দখলের পাশাখেলায় জয়ী হওয়ার আর বিশেষ কোন সম্ভাবনা নেই ফলে রাজনীতিবিদরা একে নিয়ে বিশেষ আগ্রহী নয়। কালের নিয়মে ভারতে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে এটা একটা সাধারণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
অপরপক্ষে, রাম বা রাম সম্পর্কিত যেকোনো কিছু এখন রাজনীতির ময়দানে হটকেকে পরিণত হয়েছে। বিজেপি সরকার তাদের গত দশ বছরের চূড়ান্ত অপশাসন, দুর্নীতি, অন্যায়কে ঢেকে ফেলে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার জন্য রামের নামে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করতে চাইছে। আজ Hunger Index, Press Freedom Index, Passport Index, Transparency International report ইত্যাদি আরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দেশ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। দেশে বেকারত্ব থেকে মূল্যবৃদ্ধি ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে চলেছে। অর্থনীতির দুর্দশা এমন হয়েছে যে ৫ ট্রিলিয়ন ইকোনমির জুমলা শুনে ডলারের তুলনায় টাকার দাম পা পিছলে পড়ে গেছে, মনে হচ্ছে একেবারে পাতালে গিয়ে থামবে। একদিকে কৃষক দেনার দায়ে আত্মহত্যা করছে অপরদিকে কর্পোরেটদের হাজার কোটি টাকার ঋণ রাইট অফ করা হচ্ছে। শুধু ইলেকটোরাল বন্ড এর দুর্নীতির যে সামান্য অংশ সামনে এসেছে তাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে কিভাবে কর্পোরেটরা বিজেপিকে ঘুষ দিয়ে দেশবাসীকে লুটে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছে। যতদিন যাচ্ছে দেশে গণতন্ত্র শব্দটাই একটা রসিকতায় পরিণত হচ্ছে।
এইসব কিছু ঢেকে দেওয়ার জন্য শেষ অস্ত্র হিসাবে আমিষ-নিরামিষ, হিন্দু মুসলিম এসব নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ করা হচ্ছে। দু:খের বিষয় খাবার নেই, শিক্ষা নেই, বাসস্থান নেই, চিকিৎসা নেই এইসব নেই রাজ্যের বাসিন্দারা এই ভেবে আনন্দ পাচ্ছে যে মুসলমানদের হেব্বি টাইট দেওয়া হচ্ছে। মাথায় ফেট্টি বেঁধে গেরুয়া তিলক কেটে সেও মিছিলে শামিল হয়ে স্লোগান দিচ্ছে জ্যায় শ্রীরাম। সর্বনাশের মোহ এমন ভাবে পেয়ে বসেছে যে দেশের ভালো মন্দ তো ছেড়ে দিন নিজের বাঁচা-মরার বোধবুদ্ধি পর্যন্ত লোপ পাচ্ছে। যেদিন এদের হুশ ফিরবে, যদি ফেরে তখন দেখবে নিজের বা পরিবারের খাওয়া, পরা বা চিকিৎসার পয়সাটুকুও কাছে নেই। মরার পরে লোকজন শ্মশানে নিয়ে যাবে আর বলবে 'রাম নাম সত্য হ্যায়'।
0 মন্তব্যসমূহ